Wednesday, December 2, 2009

চেশোয়াভ মিউশ : আধুনিকোত্তর বিশ্বকবিতার স্ববিরোধী যুবরাজ

কজন কবি হচ্ছেন সেই স্বৈরাচারী শাসক আপাত চোখে যাকে সবার দরকার, যার কারো দরকার নাই। সত্যিকারের একজন কবি ঈশ্বরের মত ক্ষমতাবান। এই জন্য জনসাধারণের রুচি থেকে তার রুচি বহুত তফাতে। জনসাধারণের কাছে মাঝে মাঝে সে হাস্যকর। হ্যাঁ কবি হয়ত তার লম্বাচুল, হয়ত তার উদাসী স্বপ্নালু চোখ, হয়ত সে মদ খায়, হয়ত সে মাতাল, হয়ত সে ঈশ্বর আর ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী_মায় নাস্তিক। ততক্ষণ সে নিরাপদ জোকার যতন তার স্বধর্ম সে জনসাধারণের উপর চাপিয়ে দিতে চায়না। আর সত্যিকার অর্থে যখন তা ঘটে তখন সে জনগণ,ধর্ম আর প্রথার শত্রু। আমি আগেই বলেছি কবি এমন এক স্বৈরাচারী আত্মা যার কোন লোকজন নাই। ফলে রাষ্ট্রীয়-ধর্মীয়-প্রথাবাদী সন্ত্রাসের কাছে সে হয়ে পড়ে অসহায়। ফলত সে নিহত হতে পারে। তার মতামতের জন্য। যদি তাও না হয় তবুও সে নির্বাসিত কিংবা পলায়ন বাদি। সত্যিকারের একজন কবি গ্রামে বা নগরে সে আত্মনির্বাসিত। কবিদের নিরাপদ বাসস্থান হিসাবে চিহৃত এমন কোনো জনপদ দুনিয়াতে নাই। তার নিবিষ্টতা দরকার, প্রয়োজন আত্ম মগ্নতা। আমার বিশ্বাস হট্টগোলের ভেতর কবিতা তৈরী হতে পারে না। একজন কবি অনেক কিছুই জানে। কিন্তু সে বলতে পারেনা সে কি কি জানে আর কি কি জানে না। মহত্তর কোন কবিকেও যদি পুচ করা হয়'কাকে বলে কবিতা'। তাহলে আমার বিশ্বাস সেন্ট অগাস্তিনের মত সেও বলবে যদি আমাকে পুচ করা হয় ত আমি জানি না। না হয় জানি। আর কুড়ি জন কবিকেও এই একই প্রশ্ন করা হয় তাও মনে হয় কুড়ি জনের অনুভুতি হবে কুড়ি রকম।
'কাকে বলে কবিতা যদি তা না বাঁচায় দেশ কিংবা মানুষকে'। এভাবেই চেশোয়াভ মেউশ বিশ্বিত হয়েছিলেন তার প্রথম দিকের এক কবিতায়। গত শতকে তিনি তখন নাজি বিরোধী প্রতিরোধ কমিটির লগে তলাকার রাজনীতিতে। প্রায় একটা ব্যাপারে ভেবেছি যে পৃথিবী যেমন পরির্বতীত হয় নিরন্তর যেমন গত একশ' বছর আগেকার মানুষের পোশাক দেখে আমাদের হাসি পায় এই সময়ে বসে। একজন কবির চিন্তাও এভাবে পরির্বতীত হতে থাকে। তার চিন্তা প্রসারিত হতে হতে তার ধারণা গুলো বদলাতে থাকে। এই জন্য একজন কবির প্রথম দিকদার কবিতার লগে পরিণত বয়সের কবিতার চিন্তার তফাত হতে পারে। হতে পারে স্ববিরোধীতাও। পরে তার মধ্য বয়সের রচিত আর এক কবিতায় তিনি বলেছেন 'কোনো দেশকে ভালবেসো নাঃ দেশগুলো চট করে উদাও হয়ে যায়... মানুষকে ভালবেসো নাঃ মানুষ চট করে ধ্বশে যায়। এখানে মিউশের স্ববিরোধীতা লক্ষণীয়। প্রথমার্ধে তিনি বললেন কবিতাকে হতে হবে দেশ ও মানুষের বাচার উপায়। দ্বীতিয়ার্ধে তিনি বলছেন মানুষ আর দেশকে ভালবেসোনা। এভাবেই কবির ধারণাসমুহ বদলাতে থাকে। কবি স্ববিরোধী হতে পারে। তিনি দার্শনিক নন। এ ব্যাপারে পার্টিজান রিভিয়্যুতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জবানবন্দি দেন।
'আমি স্ববিরোধীতায় পূর্ণ মানুষ। সেটা অস্বীকারও করবোনা। আমি ফরাসি দার্শনিক ওয়েইল সিমঁর লেখা পত্র অনুবাদ করেছি তিনিতো পরস্পর বিরোধীতার সমর্থক। আমার দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় রয়েছে। এরকম ভান করা আমি পছন্দ করিনা।' এটা ছিল আসলে পরিবর্তনের সমস্যা। কম্যুনিজম অনেকটা নারীর মত। যখন মানুষ সাম্যবাদি সমাজের স্বপ্ন দেখে সেটা প্রেমে পড়ার মত ব্যাপার। তখন সে ঝাপিয়ে পড়ে তার আদর্শ সমাজের বাস্তবায়নে আর যখন সেটা বাস্তবায়িত হয়ে যায় তখন সৃজনশীলরা বিশেষ করে কবিরা গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে আসেন। তাদের পরিণতি হয় দাগা খাওয়া প্রেমিকদের মত। হয়ত পালিয়ে যায় তারা দেশ থেকে হয়ত কেও বেছে নেয় আত্মহনন। এটা দেখা গেছে কম্যুনিষ্ট শাসিত প্রায় সকল দেশেই। প্রাক্তন সোভিয়েত থেকে শুরু করে পূর্ব য়ুরোপের দেশ গুলোর দিকে তাকালে আমরা তা অনুধাবন করতে পারি। এই ব্যাপারে পোল্যান্ডের আরেক কবি ভিসুয়াভা সিম্বোর্সকা তার এক সাক্ষাৎকারে জবান দিয়েছিলেন। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো' কমুনিজম পছন্দ করতেন আপনি, লিখতেন বস্তুবাদি দৃষ্টিভঙ্গিতে আর এখনো কি তাই? সিম্বোর্সকা বলেছিলেন" খুব মুশকিলে ফেললেন। এই সময়ের মানুষ সেই সময়টাকে বুঝতে পারেনা। মানবতাকে রক্ষা করতে চাইছিলাম আমি। কিন্তু আমি বেছে নিয়েছিলাম ভুল পথ। মানবজাতির প্রতি ভালবাসার কারনে এটা করেছিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম পরে যে মানব জাতিকে ভালবাসা উচিত নয়। আপনি বরং তাদের পছন্দ করতে পারেন। পছন্দ! তবে ভালবাসা নয়। মানবতাকে আমি ভালবাসি না, আমি ব্যক্তিসত্ত্বাকে পছন্দ করি। আমি মানুষকে বুঝার চেষ্টা করি, তবে তাদের কোন সমাধান দিতে পারি না। তিনি আরো বয়ান করেছিলেন' সেটা ছিল আমার জন্য খুবই কঠিন কাজ। এটা ছিল আমার তারুণ্যে এক ভুল। ভাল বিশ্বাস থেকে এটা হয়েছিল। এবং দূভার্গ্য বশতঃ প্রচুর কবিই এ কাজটি করেছিলেন। পরবর্তীতে তাদের আদর্শ পরিবর্তনের জন্য তাদেরকে জেলে যেতে হয়। সৌভাগ্যক্রমে আমি ঐ নিয়তি থেকে রেহাই পাই, কারণ প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীর স্বভাব আমার কোনদিন ছিলনা।'
এরপর স্বভাবতই পোলিশ কবি সাহিত্যিকরা ঝুকে ছিলেন ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্র্যের দিকে। তবে এ দফায় মিউশের ব্যপারটা আলাদা। মিউশের প্রথম দিকের কবিতায় উচ্ছাস থাকলেও মধ্য ও শেষ পর্বে তার কবিতা খাটি দার্শনিকতায় ঋদ্ধ। তার প্রথম দিকের একটি কবিতা।
'প্রথম যে আন্দোলন, সে হল গান করে উঠা/ অবাধ এক কন্ঠস্বর, গিরি প্রান্তর ভরাট করা/ প্রথম যে আন্দোলন সে উল্লাস/ কিন্তু তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়/ ।
এসব কবিতার সাথে যে কোনো কবি একাত্ম হয়ে যেতে পারে। একজন কবির আভ্যন্তরীণ বির্বতন এসব লাইনে প্রখর হয়ে উঠে।
'আর এখন বছরগুলো রূপ বদল ঘঠিয়েছে আমার রক্তের/ আর হাজার হাজার নিহারীকার জন্মমৃত্যু হয়েছে আমার দেহে/ আমি বসে থাকি ধূর্ত আর রাগী এক কবি/ অভিশাপে কুচকে যাওয়া চোখে প্রতিশোধের/ । তবুও তিনি আশাবাদি থাকতে চান।
'কেউ কেউ আশ্রয় খোজে নিরাশায়, যা কিনা/ কড়া তামাকের মত মিষ্টি/ যেন বিনাশের সময় পান করা এক গেলাশ ভোদকা/ এরপর তিনি সিদ্ধান্ত করেন।'কিন্তু আমার হাতে বর্তেছে এক বিশ্বনিন্দুকের আশা/ কারণ আমি চোখ মেলেই দেখেছি, শুধু আগুনের ঝলক, নিধন আর ধ্বংশ/ শুধু অবিচার লাঞ্চনা আর হাম্বড়াদের হাস্যকর লজ্জা/ আমারি ওপর বর্তেছে অন্যদের উপর প্রতিশোধ নেবার দায়, আর নিজের ওপরও/ আর সে নিজের পরিচয় দিচ্ছে এভাবে-কারন আমিই ছিলাম সেই লোক যে সব জানত/ কিন্তু সেই জ্ঞান থেকে যে নিজের জন্য কোন মুনাফা নিঙড়ে নেয়নি/।
একজন কবিকে বুঝতে হলে বস্তুত তার জীবনকেও বুঝতে হবে। কারণ সেই কবিই মহৎ যার জীবনের সাথে তার কবিতার সখ্যতা আছে। জীবনবোধ কবিতার কাছে অনেক মুল্যবান। আর এই জন্য পৃথিবীর অধিকাংশ মহৎ কবিদের জীবন হচ্ছে দূদর্শা আর লাঞ্চনার ইতিহাস। রিলকে বলতেন'প্রতিভা হচ্ছে যন্ত্রনা সহ্য করবার মতা'। এক অবর্ণনীয় দুঃখবোধ সমস্ত জীবনের আবরণ ছিল গিওকোমো লিওপার্দির। এ ব্যাপারে দার্শনিকরাও কবিদের উপর কম ক্ষ্যপা ছিলেন না।
প্লাতোনীয় সক্রাতেস সিদ্ধান্ত করেছিলেন' কবির সৃষ্ট সত্যর মুল্য অতি নগন্য। কবির আবেদনও আমাদের আত্মার অধম অংশেরই নিকট। এবং একারনে আমাদের সুশাসিত রাষ্ট্রে কবির প্রবেশ নিষিদ্ধ করলে আমরা সঠিক কাজই করব। কারণ যুক্তির বিনিময়ে কবি আমাদের আত্মার অধম উপাদান গুলোকে উত্তেজিত করে তুলে। এ গুলোকে সে উৎসাহিত এবং শক্তিশালী করে তোলে। আত্মার অধম অংশকে প্রবল করার অর্থ রাষ্ট্রের ক্ষমতা এবং পরিচালনার ভার নিকৃষ্টতম চরিত্রের হাতে তুলে দেয়া। এবং রাষ্ট্রের উত্তম চরিত্রের ধ্বংশ সাধন করা।'
সক্রাতেস নিজেই একজন কাব্যবোদ্ধা ছিলেন। তিনি প্রায়শই আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা টানতে গিয়ে হোমার থেকে উদ্ধৃতি দিতেন। তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্ত করতে পারি যে কবিকে বুঝতে না পারার ব্যামোটা আজকের নয়।'কবিতা কেন লেখে একজন কবি' এই ধরনের প্রশ্নে কবিরা রেগে উঠতে পারেন। কারণ সাহিত্যের ইতিহাস বস্তুত: কাব্যের ইতিহাস
যদিও আমরা মহাকাব্যের যুগ পেরিয়ে কবিতার আরও অনেক স্তর পেরিয়ে এসেছি।
চেশোয়াভ মিউশের কবিতায় এক দার্শনিক নি:সঙ্গ চেতনা লুকায়িত আছে। তার জবান' এক সকালে ইউনিভার্সিটির ক্যাফেয় বসে আছি, একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম যেন। এর ফলে কবিতাটা লিখে ফেললাম।' আমার বাবা মা, আমার স্বামী,আমার ভাই, আমার বোন/ প্রাত:রাশ খেতে খেতে একটি ক্যাফেটেরিয়ায় আমি শুনতে পাচ্ছি/ নারীদের কন্ঠস্বরের মর্মর ধ্বনি, পূর্ন করছে নিজেদেরকেই/খুব দরকারি এক আচার অনুষ্ঠানে/ আমি তাদের স্পন্দিত ঠোঁটের দিকে পাশ থেকে এক ঝলক থাকাই/ এবং এই পৃথিবীতে আছি বলে উচ্ছ্বল হয়ে উঠি। এই পৃথিবীতে তাদের সংঙ্গে আর একটা মুহুর্ত থাকতে পারব তার জন্য/ ক্ষুদ্র,অতিক্ষুদ্র আমিত্বকে উদযাপন করবার জন্য/'। মানুষ বস্তুত:আমিত্বময় একটা প্রাণী। শুধু মানুষই নয়,প্রায় সমস্ত প্রাণী কুলেরই এই বৈশিষ্ট্য আছে। এই কারনে আত্মরক্ষা রাটা হচ্ছে মানুষের প্রধান জৈবিক প্রকরণ। আমি বেঁচে আছি,এই আমি। মিউশের নি:সঙ্গতা অনেকটা অস্তিত্ববাদীদের মত। শুনা যায় প্যারিসে থাকা কালীন তার সাথে অস্তিত্ববাদী উপন্যাসিক আলবেয়ার ক্যামুর বন্ধুত্ব হয়েছিল। যদিও তার কবিতায় দু'জন প্রাক-সক্রাতেস যুগে দার্শনিকের উল্লেখ পাওয়া যায়। পোথাগোরাস ও হেরাক্লিতস। এদেরমধ্যে হেরাক্লিতস তার এক কবিতার শিরোনাম। সবকিছুই বয়ে চলে' এটা ছিল হেরাক্লিতসের বিখ্যাত উক্তি। বির্বতনবাদী দার্শনিকের উল্লেখ পাওয়া যায়। হেরাকিতস মনে করতেন 'নিশ্চয়ই কোন একধরনের বৈশ্বিক প্রজ্ঞা রয়েছে যার নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু ঘটে । তাকে তিনি ঈশ্বর না বলে বলতেন 'লোগোস'। এই গ্রিক শব্দটির অর্থ হচ্ছে প্রজ্ঞা। এই প্রজ্ঞা সবকিছুতেই বিদ্যমান। এবং হেরাকিতসের আরও একটি বিখ্যাত ধারনা হচ্ছে 'সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে একটা দ্বন্ধ তথা বৈপরিত্যের মধ্য দিয়ে। বস্তুর ক্রম বিন্যাসে ভাল আর মন্দ এই দুয়েরই যার যার স্থান রয়েছে। বৈপরিত্যের এই নিত্য আন্তসম্পর্ক না থাকলে জগতের অস্তিত্ব থাকত না। দিন আর রাত,শীত আর গ্রীষ্ম,যুদ্ধ আর শান্তি, ক্ষুধা আর পরিতৃপ্তি এই হচ্ছে লোগোস।
মিউশের মতে' সে যেই হোকনা কেন। যখন ভোর হয়ে আসে সে দেখছিল ভাঁজখোলা পাহাড় গুলো/....দিনের পর দিন। আর সে খেয়াল করার আগেই বছরের পর বছর/... সে কার জন্য, সে ভেবে ছিল, এমন ঐশ্বর্য্য? শুধু আমার একার জন্য?/অথচ আমি মরে যাবার অনেক পরেও তো থেকে যাবে এই সব/... আমিই যদি সমগ্র মানব জাতি,ওরা কি তবে'তারা'আমাকে বাদ দিয়েই?/
মিউশ রুশ, স্লাভ পোলিশ না আমেরিকান সেটা কোন ব্যাপারই নয়। সত্য কথা হচ্ছে যে তিনি বিংশ শতাব্দির মহৎ আধুনিক কবিদের একজন হয়েও আধুনিকোত্তর। কারণ শেষ পর্যন্ত আশাবাদীতাই তার কন্ঠস্বর। তাকে মহত্তম বলেছেন আর এক রুশ নোবেল প্রাপ্ত কবি যোশেফ ব্রদস্কি। সম্ভবত:কবিরা ভিন্ন তাদের কন্ঠস্বরের কারণে, আঙ্গিকের কারণে, নইলে সব মহৎ কবিরাই এই পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য অথবা ন্যায়ের শাসনে আলোকিত দেখতে চেয়েছেন। বাংলাভাষার বিষাদাচ্ছন্ন কবি জীবনানন্দ দাশেরও এত যে বিষাদ। তিনিও শেষ পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠে বলেছেন'আমরা তিমির বিনাশী'? অনেক পথ পাড়ি দিতে হয় কবিকে। যেন সে কোন গভীর সামুদ্রিক ইলিশ ঢেউয়ের তরঙ্গ ভেঙ্গে ভেঙ্গে মাৎসান্যায়ের ভয় থেকে দূরে তার ডিম পাড়ার জন্য তাকে খুজে নিতে হয় নিস্তব্দ তরঙ্গবিহীন কোন নদী। কারণ ইলিশ মাতা চান তার সব সন্তান যেন বেঁচে থাকে। মিউশও তেমনি। তার সময় তাকে বলে দিয়েছে কোথায় তাকে পালাতে হবে বুকে কবিতা সৃষ্টির ডিম নিয়ে। প্লাতনীয় সক্রাতেসের পরামর্শ স্বত্বেও কবিতা বেঁচে আছে, যতদিন ভাষা বেঁচে আছে, শব্দ বেঁচে আছে, মানুষ কথা বলছে, কবিদের শেষ নাই। বিনাশ নাই। মিউশ মারা গেছেন ২০০৪ সালের ১৪ আগস্টে। তাঁর কবিতাসমুহ খুজে নেবে কোন ইপ্সিত কবিকে। সেও মিউশের মত বলবে

' আর তুমি যা কর সেতো একই কথা বারে বারে আওড়ানো/ যদি শুধু যথেষ্ট সময় থাকত/ যদি শুধু যথেষ্ট সময় থাকত/ কোন মন্দিরের স্তম্ভ গুলোর মধ্য দিয়ে শুদ্ধিরণের উৎসবে/ লোকের জমায়তকে পথদেখিয়ে
নিয়ে যেতে পছন্দ করতে তুমি/ শুদ্ধিকরণের উৎসব? কোথায়? কখন? কার জন্য?