Thursday, December 10, 2009

মাই ফিউডাল লর্ড অথবা তাহমিনা দুররানির পাকিস্তান

শুধু বাংলাদেশে জন্মেছি বলে নয়। আমার এই বয়সে আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানিদের বদনাম ছাড়া কোনো সুনাম শুনিনাই। যদিও পাকিস্তানে আহমাদ ফায়েজ, ইকবালদের মতো কবি ছিল। একবাল আহমদের মতো চিন্তক ছিল যে কিনা ওয়াদি সাঈদের গুরু ছিল। অবশ্য এরা প্রত্যেকেই প্রায় জীবনের সিংহভাগই দেশের বাইরে অতিবাহিত করেছে। প্রাশ্চাত্যে যে সমস্ত এশিয়ান লেখকরা বাস করে তাদের লেখাও আমরা এখন দ্বিধাচিত্তে গ্রহণ করি। বিশেষ করে সালমান রুশদি আর নীরদ সি চৌধুরীর পর। অনেক আগে সংগৃহীত তাহমিনার এই বইটি পড়ি সম্প্রতি।
পড়তে শুরু করে মনে হলো হয়তো আরেকটা দক্ষিণ এশিয়ার রগরগে কাহিণী পড়বো। কারণ কিছুদিন আগে শোভা দে আর রাধিকা ঝার দুটি বই পড়ে সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

পুরা কাহিনীটা পড়লে বুঝা যায় পাকিস্তানের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজের বঞ্চনার প্রতিকারহীন প্রতিবাদের জন্য তার এই কলম ধরা। কারণ তাহমিনা নিজেও ইতোমধ্যে রাজণীতিবিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। তবুও মুস্তফা খারের মতো সামন্তীয় রাজনীতিকের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি রাজনীতীতে কেবলমাত্র একজন নারীর হওয়ার কারণে তার কিছু করার থাকেনা। কারণ পাকিস্তানের গণ মানুষও নারীদের কোনো সম্মান দেয়না বা তাদের কথা বিশ্বাস করেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অন্য এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকের ফেলাচ হিসাবে কাজ না করছে। যেমন বেনজীর ভুট্টো। বেনজীর ভুট্টো ছিল ভুট্টোর
ফেলাচ। যেমন আমাদের দেশে খালেদা জিয়ার আর হাসিনা মুজিবের।
মুস্তফা খার যতদিন জেলে ছিল পাকিস্তানি জনগণ রাজনীতিতে তাহমিনাকে মেনে নিয়েছে যখন খার জেল থেকে বের হলো। জনগণে চিন্তা ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে যাও।
মাই ফিউডাল লর্ড মূলত পাকিস্তানের সামন্তীয় রাজনীতিবিদ মুস্তফা খার কাহিনী।

যদিও তাহমিনার আত্মজীবনীমুলক লেখা। কারণ তার জীবনের বেশিরভাগ সময় মুস্তফার মতো একজন সামন্তীয় প্রভুর স্ত্রী হিসাবে কাটে।
তাহমিনার মতে মুস্তফা নেহায়েত উচ্ছাবিলাসী এক নেতা। আবার স্বভাবের দিক দিয়ে যে পেয়েছে আফগান উত্তরাধিকার। যাদের জীবনে মেয়েমানুষ হচ্ছে স্রেফ অত্যাচার আর ভোগ করবার যন্ত্র। এতে অন্যকোনো ধারণা নাই। ধর্মীয় বা ঐতিহাসিক। ক্ষমতার বলে তাহমিনা সহ প্রায় সাতজন মহিলাকে সে বিয়ে করেছে। সবাই পাকিস্তানের উচ্চবংশীয়। নারী শিকারের নেশা আর কৌশল দুটোই তার আয়ত্তে। প্রায় প্রত্যেকের কপালে ছিল সন্তান হয়ে যাবার পর মোল্লাতান্ত্রিক গ্রামে নির্বাসন। এবং কোনো ধরণের যোগাযোগ হীন তিল তিল মৃত্যু। তাহমিনাই একমাত্র স্ত্রী যে কিনা অনেক শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেও তাণ্ডবের মুখে নিজেকে রক্ষা করবার ক্ষমতা দেখিয়েছে।
তাহমিনার কথা হচ্ছে অধিকাংশ পাকিস্তানি নেতাদের মানসিকতা মুস্তফা খার মতোই সামন্তীয়। যাদের কোনো আদর্শ নাই। ক্ষমতায় যাবার জন্য তারা সবকিছু ত্যাগ করতে পারে। তাদের মুল আগ্রহ হচ্ছে স্বচ্ছল ভোগী জীবন যাপনে। ধম তাদের ব্যবহারের অস্ত্রমাত্র।
মুস্তফা খার যে চরিত্র তাহমিনা রূপায়ণ করেছেন। তাকে বিশ্বাস করবার যতেস্ট অবকাশ আছে। কিন্তু তাহমিনার প্রথম স্বামী নীরিহ আনিসকে ধোকা দিয়ে তাহমিনা যেভাবে উচ্ছাবিলাসী হয়ে মুস্তফা খার দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়াস পেয়েছে তাতে পাকিস্তানি উচ্চবংশীয় নারীদের জীবনদর্শণ নিয়েও প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, ইসলামী বিশ্বের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ও আফগান নিয়ে সোভিয়েত আমেরিকা পাকিস্তানের ত্রিমুখী সম্পর্ক ও তার পরিণতির কারণে লেখাটা শুধু মুস্তাফা খার জীবনী বা তাহমিনার আত্মজীবনী হয়ে থাকেনি। হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার একখণ্ড ইতিহাস। যা ইচ্ছা করলে বিনির্মাণ করা যায়।
তার গদ্য সরল-স্বাবলিল তরতরিয়ে পড়া যায়।