Sunday, April 14, 2013

লিমন প্রশ্নে রাষ্ট্র অথবা অকার্যকর রাষ্ট্রের শিরা উপশিরা



লিমন নামের এক কিশোরের পায়ে গুলি করেছিল র‌্যাব নামের আইন প্রয়োগ বাহিনীর সদস্যরা। যদিও লিমনের পক্ষে এই দুর্বল অভিযোগ এই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে বিশ্বাস করতে এখনো আমাদের ভয় হয়। তারচেয়ে পুলিশ র‌্যাবের অভিযোগ লিমন সন্ত্রাসী, র‌্যাবকে হামলা করতে গিয়ে তার পা হারাতে হয়েছে, সর্বপরি পঙ্গু ছেলেটির উপর হামলা, তার নামে অস্ত্র মামলা দেয়া ইত্যাদি বিশ্বাস ও সমর্থন পলাতক নাগরীক হিসাবে আমাদের জন্য নিরাপদ। অনেক দিন ধরে লিমন খবরের কাগজের শিরোনাম হচ্ছে। এটা জাতি হিসাবে আমাদের জন্য বড় অস্বস্থিকর। অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছে একদিকে লিমন অন্যদিকে একটি রাষ্ট্র এই সামান্য বিষয় নিয়া অনেক বেশি তর্ক শুরু করেছে। র‌্যাব পুলিশ আইন আদালত রাষ্ট্রের এই স্তম্ভটির বিরুদ্ধে কিসের শক্তিতে এরকম এক ক্ষুদ্র দুর্বল পরিবার অনমনীয়ভাবে লড়াই করার চেষ্টা চালাচ্ছে? তা চিন্তা করতে সক্ষম মানুষমাত্রকেই ইতিমধ্যে ভাবিয়ে তুলেছে। এ নিয়া হাছামিছা অনেক কথাবার্তা চালু হয়েছে বাজারে।

মেকিয়াভেলিয়ানরা ইতিমধ্যেই স্রেফ এই ব্যাপারটা নিয়া রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ কার্যকর কিনা সেই প্রশ্ন তুলবেন। এত ক্ষুদ্র একটা বিষয় নিয়া যেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এতদিন ধরে ব্যস্ত তটস্থ থাকতে হয় সেই দেশে আদৌ কোনো আইন আছে কিনা সেই সন্দেহও তারা করবেন। বিশেষ করে যে দেশে ক্রসফায়ারের মত বিষয়ও নিরন্তর জারি আছে। তাকে ঢেকে রাখার জন্য যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফাই গায় সেরম একটা রাষ্ট্রে এটা অকল্পনীয় বৈকি! রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের শ্রেণিচরিত্র আন্দাজ করতে হলে খানিকটা ইতিহাসের পায়ে ভর করে পেছন দিকে হাটতে হবে। খুব বেশিদূর যাবো না। কারণ ইতিহাস একটা না-গাথা অকল্পনীয় মালার মত যা কেবল সূত্র উৎপাদন করতে থাকবে।

আমি স্রেফ একাত্তর পর্যন্ত ফিরে দেখতে চাই। তাইলে দেখা যায় একাত্তরে বিপ্লব সফল হয় নাই, প্রতি বিপ্লব সফল হয়েছে। অর্থাৎ  অস্ত্রহীন সহায়হীন নিস্বম্বল গণমানুষ পাকিস্তানি জান্তার সমস্ত বুলেট, শিশ্নের প্রহার, দেশিয় দালালদের লোলুপতাকে কেবল আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে কাধে ঠেলে পার করেছিলেন। সাথে যুক্ত হয়েছিল ভারতিয় স্বার্থ। সন্দেহ হয় সেই গণমানুষও সচেতন ছিলেন কিনা তাদের স্বাধীনতা বিষয়ে। অথবা স্বাধীনতা বলতে ঠিক কি বুঝায় তা তারা অনুধাবন করেছিলেন কিনা। অথচ সেই বিজয়ও তাদের থাকে নাই। পরবর্তীকালে গ্রেপ্তার হয়ে যায়। এমন কিছু মানুষ ক্ষমতাকে হাইজেক করেছিলেন যারা নয়মাস যুদ্ধকালীন সময়ে মাঠেই ছিলেন না বলতে গেলে ফলে ‘র’ বা ‘সিআইয়ে’র হাতে দেশের মরা অর্থনীতিকে সমর্পন করতে তাদের হাত কুণ্ঠিত হয় নাই। 

একাত্তরের দার্শনিক ভিত্তি এতই নড়বড়ে ছিল যে পাকিস্তানি শাসকদের দেশিয় দোসর বুর্জোয়ারা, রাজাকাররাও পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সার্টিফিকেট ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একাকার হয়ে গেছিলেন শাসক গোষ্ঠীর সাথে। অবশ্য সেই সময়ের ভারত পলাতক দেশপ্রেমিক পেটিরা আর রাজাকারদের মধ্যে তেমন তফাৎ ছিল না। ফলে যে সব সাধারণের পুরা পরিবারই নিকেশ হয়েছিল নয়মাস ব্যাপী যুদ্ধে তারা ফের মাঠে ফিরে গিয়েছিলেন নিজের দেহটাকে খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার উসিলায়। বলতে চাই গণমানুষ যেই তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই রয়ে গেলেন। শাসক শ্রেণির নিজস্ব আইন প্রয়োগ বাহিনীর সাথে পাকিস্তানি আর্মি বা আইন প্রয়োগ বাহিনীর বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে নাই। জনগণের সাথে পাকিস্তানি আইন প্রয়োগ বাহিনীর যেইরকম সম্পর্ক ছিল স্বাধীন দেশের শাসক শ্রেণির আইন প্রয়োগ বাহিনী তার ব্যতিক্রম নয়।

শেখ মুজিব তো নিজস্ব একাধিক বাহিনীই গঠন করেছিলেন। শুধু বাহিনীই নয় প্রথম সফল ক্রসফায়ারের জনকও ছিলেন তিনি। সিরাজ শিকদার ছিলেন বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের প্রথম শহিদ। তার হত্যার পরও এখন প্রতিটি ক্রসফায়ারের শেষে মিডিয়ায় যেই কল্পিত পাল্টা হামলার গল্প ফাঁদা হয়, সে রকম বলা হয়েছিল। ফলে কাউন্টার হিসাবে এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে তারা নিজের বাহিনী হিসাবেই ভেবেছিলেন। সেভাবেই গড়ে নিয়েছিলেন তাদের। এখনও তা আমরা দেখতে পাই। সরকার গঠন করার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান থেকে শুরু করে বাহিনীতে, সচিবালয়ে, উর্ধ্বতন পদগুলাতে নিজস্ব লোক ঢোকানোর এক তীব্র প্রতিযোগিতা। ফলে রাষ্ট্রের কোনো স্থায়ী চরিত্র কখনোই পায় নাই বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি শাসক বাহিনীই বাংলাদেশকে 'আমার বাংলাদেশ' হিসাবেই ভেবেছেন।   আমার পিতা বা আমার স্বামীর বাংলাদেশ হিসাবে ভেবেছিলেন। জনগণের বাংলাদেশ নয়।

এসব পানসে জাতীয়তাবাদ শিশু বা বুড়াকে জোর করে ঔষুধ খাওয়ানোর মত প্রায়। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত খানিকটা পৈত্রিক তালুকের মতই এদেশে রাজনীতিও প্রবাহিত হয়ে আসছে। ফলে এহেন হাইজেক স্বাধীনতা থেকে জনগণ যে নামমাত্র মুনাফাও তুলতে পারে নাই তার বড় প্রমাণ আজ বরিশালের পা কাটা লিমন।যেন সেই যুদ্ধ এখনো শেষ হয় নাই। এখনো হানাদার বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের গুম করে ফেলছে, হত্যা করছে, যত্রতত্র গুলি করে সন্ত্রাসী বলে চালাচ্ছে। রাস্তা থেকে তুলে নিয়া নিরপরাধ কিশোরী তরুণীদের গণধর্ষণ করে ক্ষতবিক্ষত লাশ ফেলে দিচ্ছে। আগে তাদের উপর এই ধরনের অত্যাচার চালানো হতো মুক্তিবাহিনী বলে। যেন ক্ষমতার মসনদে সেই বিদেশিরাই বসে আসে। আসলেও তাই বাংলাদেশ মানে এই অঞ্চল সবসময় শাসিত হয়েছে বিদেশিদের দ্বারা। আর্য, মোগল, ইংরাজ, পাকিস্তানি।

একাত্তরের পর থেকে যারা বাংলাদেশের ক্ষমতাকেন্দ্রে আছে তারাও মননে বিদেশি, যতই জাতীয়তাবাদের জিগির তুলুক না কেন। আমলা থেকে পাতি নেতা পর্যন্ত সবারই সামান্য সর্দিজ্বর হলে সিঙ্গাপুর চলে যায়। এদের সন্তান লেখাপড়া করে বিলাতসহ ইউরোপ আমেরিকায়। এরা অবকাশ যাপন করে ব্যাংককে, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডে। আবার অবসর নেয়ার সাথে সাথে তারা অভিবাসী হয়ে চলে যায় বিদেশে। খোদ শেখ হাসিনার সন্তান পাকাপাকিভাবে থাকেন আমেরিকায়। বোনেরা থাকেন ইংলন্ডে। খালেদা জিয়ার সন্তানাদিও তাই। দেশগুলাতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার বুর্জোয়া নীতিবাদেও তাদের বিশ্বাস নাই। বাংলাদেশের শাসক শ্রেণির চরিত্র লুণ্ঠনকারীর মতই। এই দেশটা আসলেই তাদের লুণ্ঠনের ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। এই জন্য রাষ্ট্রটা খানিকটা আধা সামন্তীয় চেহারায় জনগণের সামনে খাড়া হয়। বলাই বাহুল্য বাকী অর্ধেক বুর্জোয়াদের। 

লিমন বা তার পরিবার একটা সিম্বল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে অসহায় শত শত পরিবারের একটি। এই পরিবারও হয়তো জানে যে কোনো মুহূর্তে গোটা পরিবারটাকেই নিকেশ করে দিতে পারে। অজস্র খুনের কোনো আগামাথা পাওয়া যায়না যেই দেশে সেখানে এটা খুবই স্বাভাবিক। তবুও তারা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে। শত শত পরিবার জানে তাদের অবস্থাও এরচেয়ে ভাল নয়। তবুও তারা লিমন বা তার পরিবারের পক্ষে দাড়াচ্ছে না। দাড়াবে না। কারণ তারা বাধা রাজনৈতিক রজ্জুতে। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে রাষ্ট্রের শিকার হওয়া মানুষ যখন কোনো ভাবেই প্রতিকার পেতে ব্যর্থ হয় হয়ত তাকেই বলে ফেসিজম। এই ফেসিজম শুধু সরকারের এজেন্ডা থাকেনা। যার প্রভাব জনগণের চরিত্রেও পরিলক্ষিত হয়। যেমন আমরা ইদানিং দেখছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মদদে জনগণ ডাকাত সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারছে জনগণকে। যেমন আমিন বাজারের বড়দেশি গ্রামে ছয় ছাত্রকে পুলিশের উপস্থিতে গ্রামবাসীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে মারলো। নোয়াখালীতে এক নিরপরাধ কিশোরকে পাগলা কুকুরের মত পিটিয়ে মারলো জনগণ। এরও উস্কানিদাতা ছিল পুলিশ বাহিনী।

বাংলাদেশের থানাগুলার কথাই ধরা যাক। হরর সিনেমার মত লাগে। অভিযোগ দিতে গেলে টাকা। সার্জসিট দিতে গেলে টাকা। জিডি করতে গেলে টাকা। আসামী ধরাইতে গেলে টাকা। যে আসামী পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে গেলেও টাকা। আবার আসামী পক্ষের টাকার জোরে রাতারাতি বদলে যাচ্ছে মামলার ধরণ। তাহলে তথাকথিত রাষ্ট্রীয় ন্যায় বিচারের ধারণাটা এখানে কি দাড়াচ্ছে? এবং এই ফেসিজম অকার্যকর রাষ্ট্রের আরেকটি উৎকৃষ্ট উদাহারণ। বাংলাদেশের জনগণ শাসকশ্রেণির নির্ভরতার জায়গা নয়। শাসন বা শোষনের জায়গা। তাদের নির্ভরতার জায়গা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। ফলে মার্কিনি ও ভারতিয় পলিসির লগে নিজেদের খাপ খাওয়াতে তারা যত ব্যস্ত সময় কাটায় তার কিয়দাংশও জনগণের জন্য ব্যয় করে না। এইটা হচ্ছে অকার্যকর রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষণ। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বিদ্যুৎ আইন ব্যবস্থায় সরকারের কোনো আগ্রহ না থাকায় দেশে নিত্য গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজমান। সরকার প্রধানদের তথাকথিত আশাবাদ ও উন্নয়ন বিষয়ক মিথ্যাচার বাদ দিলে শাদা চোখে আমরা দেখতে পাই এক নিরব দুর্ভিক্ষ বয়ে বেড়াচ্ছে পুরা জাতির নিম্নবিত্ত ও নিম্মমধ্যবিত্তরা।

তরি তরকারি ফলমুল মাছমাংসে ফরমালিন আজ সতসিদ্ধ বিষয়। গণহারে মানুষ বাজার সিন্ডিকেটের বলি হচ্ছে নিয়ত। কেনসার খুব দ্রুত মহামারি আকার ধারণ করবে বলে মনে হচ্ছে দেশে। অন্যদিকে বাড়ছে ঔষুধের কোম্পানি। কারণ ঔষুধ কোম্পানির পোয়াবারো মানেই মানুষের সর্বনাশ। চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন ডাক্তার আর ঔষুধ কোম্পানী যৌথ ব্যবসা। খাদ্য বিষক্রিয়ার যেন এক নিরব গণহত্যাই সংগঠিত হতে চলেছে দেশে।অন্যদিকে দেশকে ভেতর থেকে কুরে খাচ্ছে মেকনামারার এনজিওগুলা। নানান এজেন্ডায় নানান কিসিমের রূপ ধরে তারা বিভ্রান্ত করছে মানুষকে। সুদখোর ইউনুসের মত একজন এনজিও কর্মীও একটা রাষ্ট্রের চেয়ে ক্ষমতাবান। এসবই অকার্যকর রাষ্ট্রের শিরা উপশিরা।

মেকনামারার এনজিও পলিসির পেছনে ছিল আসলে রাষ্ট্রকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার কৌশল। সরকারের সব কাজ নিয়াই আসলে সওদা করে এনজিও গুলা। রাষ্ট্রের ভেতর থেকে সরকারকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হতে না দেওয়াও তাদের অন্যতম এজেন্ডা। দেখা যাচ্ছে বৃহৎ জনগণের কাছে সরকারের কাজ সাম্রাজ্যবাদিদের লাঠিয়ালের মত। বলা হয়ে থাকে দুনিয়ার তাবৎ সেনাবাহিনীই মার্কিন সেনাবাহিনী। দুনিয়ার এমন রাষ্ট্র নাই যেখানে মার্কিন সেনাবাহিনী নাই। যেখানে স্বমূর্তি রূপে তারা নাই সেখানে তৃতীয় বিশ্বের সেনাবাহিনী থেকে নিয়েই এমন বাহিনী তারা গঠন করে যাকে মার্কিন সেনাবাহিনী হিসাবেই গণ্য করা হয়। তাদের বেতনভাতা সবই মার্কিন বহন করে।বিশেষ করে ভিয়েতনামে পরাজয়ের পর তৃতীয় বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের পলিসি বিস্তর পরিবর্তিত হয়েছে।

এখন হানাদার অন্যদেশ থেকে আক্রমণ করে না। তাদেরকে স্বজাতির ভেতর থেকেই তৈরি করা হয়। এরা আমাদেরই ভাই বেরাদর এলাকাবাসী। একেকটা বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর তাকে অন্ধ করে দেয়া হয়। তার কাজ হচ্ছে মানুষ হত্যা। মানুষের সাথে প্রতারণা করা। অর্থাৎ সিস্টেম তাকে চালনা করে নিজস্ব সফটওয়ারে। তাকে বলা হয় এই তার চাকুরি। অ্যাডওয়ার্ড সাঈদ এক সাক্ষাৎকারে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছিলেন এক মার্কিন সেনার। সাঈদ সাহেব মার্কিন সেনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি সেনাবাহিনীতে ঠিক কোন কাজটি করেন? জবাবে মার্কিন সেনা বলেছিলেন, তিনি বিমান নিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রদত্ত টার্গেট পুর্ণ করেন। তার মানে কি আর খুলে বলতে হবে? তার মানে রাষ্ট্র তাকে যেই পরিমাণ মানুষ হত্যা করতে বলেছে সেইপরিমাণ মানুষ হত্যার চেষ্টা চালান তিনি। এইটা স্রেফ একটা চাকুরী হিসাবেই দেখা হচ্ছে। এই টার্গেট পুরণের মাধ্যমেই আসছে তার পরিবারের সচলতা। রাষ্ট্র খোদ নিজেই বদলে দিচ্ছে ন্যায়ের সংজ্ঞা। একথা সবাই জানেন রাষ্ট্রের মত একটা দমনপীড়নকারী প্রতিষ্টান তার ক্ষমতা ও তার বিকিরণের মাধ্যমে নিয়ত নতুন নতুন ন্যায়ের জন্ম দিয়ে থাকে। রাষ্ট্রের চরিত্র এক কথায় চমৎকার ব্যক্ত করেছিলেন ভ্লাদিমির লেলিন তার 'রাষ্ট্র' বক্তৃতায়। তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্র হচ্ছে এক শ্রেণি কর্তৃক অন্য শ্রেণিকে শোষণ করবার যন্ত্র মাত্র।

শোষক পুঁজিপতিদের রক্ষা ও বিদেশি শক্তির দাসত্ব ছাড়া তৃতীয় দুনিয়ার ক্ষমতাবানরা চলতে পারে না। জনগণ তাদের কাছে স্রেফ বাজার। তাদের মারো, বেচো, তাও সংবিধানসম্মত। সেই চির বঞ্চিত, লাঞ্চিত ও শোষিত জনগণেরই প্রতিনিধি আজ লিমন। ক্রসফায়ারে পরেও বেঁচে গিয়ে লিমন কাল হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তার পায়ে গুলি করে তাকে পঙ্গু করা হয়েছে। তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে তাকে অস্ত্র মামলায় ফাসানো হয়েছে। আবার মানুষকে বুঝানো হচ্ছে এই গাজাখুরি গল্প। অচেতন অবস্থায় তার চারদিকে ছড়ানো ছিটানো ছিল অনেক অস্ত্র ও বন্দুক। লিমন যদি অচেতনই ছিল তাহলে তার কাছ থেকে কিভাবে অস্ত্র উদ্ধার হলো, যদি ১৫ মিনিট ধরে ১৫ রাউন্ড ফায়ার হয় তাহলে সেই খোসা আর অস্ত্রগুলো কই?
লিমন যখন এদেশের আদলতে বারান্দায় কাঁদে, তার সাথে কাঁদে বাংলাদেশে আত্মা। কারণ লিমনই প্রকৃত ভূমিপুত্র। বিদেশি ট্রেনিংপ্রাপ্ত আইনের পোশাক পরা হত্যাকারীরা নয়।

No comments:

Post a Comment