Sunday, April 14, 2013

স্বাধীনতার পহেলা শর্তই কথা বলবার স্বাধীনতা


ব্লগিং বলতে আমরা প্রথমে সামহোয়ার ইনকেই জানতাম। সামহোয়ার ইনে আমার বয়স ৬ বছর ৯ মাস। ব্লগিং দ্রুত জনপ্রিয় হবার পেছনে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক কারণ নিহিত। ব্লগিংয়ের আগে পত্রিকাগুলা নিয়ন্ত্রণ করতো পুঁজিপতি পত্রিকা মালিক, এখনো তাই। কিন্তু ব্লগিং সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়। যে কেউ নিজের মতামত জানাতে পারা এবং সাথে সাথে বিষয়টা নিয়ে তর্কে মেতে উঠা ইত্যাদি কারণে ব্লগিং খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তবে মতামত প্রকাশের এই অবাধ স্বাধীনতার কারণে অনেক সম্ভাবনাময় স্বাধীণচেতা প্রতিবাদি তরুণ যেমন নিজেদের একটা বলিষ্ট অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে তেমনি অজস্র প্রপাগান্ডিস্ট আত্মম্ভরী দুর্বলচিন্তার ব্লগারও আমরা পেয়েছি। এখন  অজস্র ব্লগ।

তো ব্লগ আসলে একটা প্লাটফর্ম। নিজের কথা নিজের মত করে বলার। আস্তিকনাস্তিকবিএনপিআওয়ামশিবির সবাই আছে ব্লগে। আবার সবারই আলাদা আলাদা ব্লগ আছে। এখন কথা হচ্ছে যারা ব্লগে লেখে বা ব্লগিং করে তাদেরকে ব্লগার বলা হয়। তাহলে আস্তিকনাস্তিকবিএনপিআওয়ামশিবির সবাই ব্লগার হতে পারে। আজ হেফাজতিরা ব্লগার মানে নাস্তিক বলার যেই কোশেশ করতেছেন সেইটা গায়ের জোরে মুর্খামি  ও গুপ্ত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু না।

সামহোয়ারে অসাধারণ কিছু তীক্ষ্ন মেধাবি লেখক পেয়েছিলাম তাদের মধ্যে ব্লগার হিসাবে আটক রাসেল পারভেজ অন্যতম। সামহোয়ারের তার বয়স ৭ বছর ১ মাস। রাসেলের যুক্তির যেই গভীরতা ও তা প্রয়োগের নিজস্ব কৌশল খুব দ্রুত ব্লগারদের ভেতর তার একটা অবস্থান তৈরি করে। ব্লগাররা রীতিমতো ভয় পেতাম তাকে। কারণ সামহোয়ারে যে কাউকে চ্যালেঞ্জ করবার ক্ষমতা রাখতো রাসেল। তার পড়াশোনার গভীরতাও ছিল বিশাল। তখন রাসেল আমেরিকায় থাকতো। শুধু রাসেল কেন সেই সময়ে অনেক আলোকিত ব্লগারদের পেয়েছিলাম। সাদিক আলম, আরিফ জেবতিক, ব্রাত্য রাইসু, শোহায়েল মোতাহের চৌধুরী, সুমন চৌধুরী, বাকী বিল্লাহ, ইমন জুবায়ের, হাসান মোর্শেদ, শুভ, পিয়াল, হিমু ইত্যাদি। এরা সবাই ছিলেন একসময় সামহোয়ারের নিয়মিত ব্লগার।

রাসেলের যেই জানাশুনা আমরা ধরেই নিয়েছিলাম রাসেল আমেরিকা থেকে ফিরে বড় কোনো হাউজে ঢুকবে। ততদিনে রাসেলের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত জানাশুনা হয়। বন্ধুত্ব হয়। নানান বিষয়ে পরষ্পরের মতামত ব্যক্ত করি। ক্রমে রাসেলকে জেনেছি একজন সাধারণ মানুষ হওয়া যার জীবনের ব্রত। অসাধারণ সংবেদনশীল। রাজনীতি সচেতন, অ্যাকটিভিস্ট, পড়–য়া। শেষে শিক্ষগতাকেই বেছে নিয়েছে পেশা হিসাবে। আমরা অনেকেই আহত হয়েছিলাম। কিন্তু রাসেল আপোষহীন। যদিও সে কখনোই আত্মপক্ষ সমর্থন করতো না আমাদের কাছে, এমনকি নিজের বিষয়ে কোনো কথা বলতেই পছন্দ করতো না সে। একটা হালকা টিশার্ট,জিন্স আর চটি পড়েই থাকতো সারাদিন।


তাকে ভাবতে দেখেছি দেশের মানুষ নিয়ে, দেশের অরাজক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। তার প্রত্যেকটি লেখা আর স্ট্যাটাসেই রয়েছে তার প্রমাণ। এরকম নীরব দেশ ও মানুষ প্রেমিক মানুষ এখন বিরল। সে রাসেল পারভেজকেই দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে চিন্তা করার পুরষ্কার দিয়েছি আমরা কম্পিউটার চোরের বেশে ছবি তুলে সংবাদ মাধ্যমগুলাতে। সেই রাসেল পারভেজকেই আমরা দেশ নিয়ে চিন্তা করবার কারণে আজ জেলে পুরেছি আমরা, রিমান্ডে নিয়ে তার হাতপা ভাঙ্গার পায়তারা করতেছি।

তাও আবার হেফাজতে ইসলামি সেজে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে চাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের অনুরোধে। তাও আবার করছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একটি দল যাদের নেতৃত্বে একাত্তরের যুদ্ধ হয়েছিল। আওয়ামীলীগ সম্পর্কে মহাত্মা আহমদ ছফা বলেছিলেন, আওয়ামীলীগ হারলে সবাই হারে, জীতলে একাই জেতে। তাইকি আবার প্রমাণ করতে যাচ্ছে আওয়ামীলীগ যে ভোটে জেতার জন্য দেশপ্রেমিক মেধাবী তরুণদের জানকোরবান করতেও দ্বিধা করবে না তারা। মেধাবি চিন্তকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আর নাস্তিক তকমা দিয়ে দেশকে মেধাহীন  করার যেই ষড়যন্ত্র যুদ্ধপরাধীরা শুরু করেছে তারই গড্ডালিকায় গা ভাসাবে আওয়ামীলীগ? যদি তাই করে আওয়ামীলীগ তবে আমাদের আবার সেই সিদ্ধান্তেই ফিরে যেতে হবে প্রত্যেক আওয়ামীলীগের ভেতর একেকজন ক্ষুদ্র জামাতকর্মি বাস করে। আওয়ামীলীগও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি নয়।

আমরা অতিদ্রুত দেশপ্রেমিক সুলেখক ব্লগার রাসেল পারভেজসহ অন্যান্য ব্লগারদের মুক্তি দাবি করি। মুক্তচিন্তা একটা জাতির নিশ্বাস নেবার মতই অধিকার সেটা বন্ধ করবার অধিকার কোন সরকারের নাই। স্বাধীনতার পহেলা শর্তই কথা বলবার স্বাধীনতা। সে বন্ধ করবার পায়তারা যেই করুক সেই স্বাধীনতার শত্রু।

No comments:

Post a Comment